আরিফ খাঁনঃ বেড়া উপজেলার কাজীরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন গ্রন্থাগারিকসহ প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে ঢোকার পর হঠাৎ করেই অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একজন শিক্ষকও অসুস্থ হয়েছেন। পরে তাদের বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে চিকিৎসকেরা এটাকে প্রাথমিকভাবে ‘ম্যাস হিস্টেরিয়া বা গণমনস্তাত্ত্বিক’ অসুস্থতা বলে ধারণা করলেও শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের দাবী স্কুলে কোন চেতনানাশক কোন কিছু ছিটানো ছিল।
সোমবার সকাল ১০টা থেকে শুরু করে বেলা ১১টার মধ্যে উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরের বিদ্যালয়টিতে এই ঘটনা ঘটে। এতে শিক্ষার্থী-শিক্ষক, অভিভাবক এবং এলাকাজুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
শিক্ষক ও অভিভাবকদের দাবি, বেশির ভাগ শিক্ষার্থী সোমবার অসুস্থ হলেও ঘটনাটি প্রথম দেখা যায় গতরবিবারে। ওইদিন (১৮ মে) দুপুর দুটার দিকে সাতজন ছাত্রী হঠাৎ করেই অসুস্থ বোধ করতে থাকে। এক পর্যায়ে কয়েকজন জ্ঞানও হারিয়ে ফেলে। তাদের স্থানীয় চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রবিবারের বিষয়টিকে শিক্ষক-অভিভাবকেরা অনেকটা স্বাভাবিক হিসেবেই নিয়েছিলেন।
সোমবার ক্লাস শুরু হওয়ার আগে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের আঙিনায় ঢোকার পর থেকে রবিবারের মতো একইরকম অসুস্থ বোধ করতে থাকে। একপর্যায়ে অ্যাসেম্বলি শুরু হলে কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে সেখানেই পড়ে যায়। ভয়ে অন্য শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে দৌড়ে ঢুকলে সেখানেও গণহারে তারা অসুস্থ হতে থাকে। তাদের বেশির ভাগই একপর্যায়ে চেতনা হারিয়ে ফেলে। এভাবে ৪০ থেকে ৪৫ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। শিক্ষক ও সুস্থ থাকা শিক্ষার্থীরা দৌড়ে গিয়ে তাদের মাথায় পানি ঢালতে থাকে। খবর পেয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা বিদ্যালয়ে ছুটে আসেন। শিক্ষক ও অভিভাবকেরা অসুস্থ শিক্ষার্থীদের নিয়ে বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কাশিনাথপুর উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ বিভিন্ন বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র নিয়ে তাদের চিকিসা দেন। অনেক অভিভাবক শিক্ষার্থীদের বাড়িতে নিয়েও চিকিৎসক ডেকে এনে চিকিৎসা দেন।
সরেজমিনে দুপুর ১২টার দিকে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টি ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের আশেপাশের ডিসপেনসারিগুলোতে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসা চলছে। এমনই কয়েকজন শিক্ষার্থীকে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ভ্যানে করে বাড়ি অথবা অন্য কোনো হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
প্রাথমিক চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠা সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া খাতুন বলে, ‘ক্লাসে ঢোকার পর মাথা ঘুরতে থাকে ও বমি বমি লাগে। এক পর্যায়ে বেশ কিছুক্ষণের জন্য জ্ঞান হারায়া ফালাই। এখন কিছুটা ভালো লাগতেছে।’
এসময় এক অভিভাবক মোছাঃ আছিয়া খাতুন জানান, আমার ছেলের অসুস্থর কথা শোনা মাত্র আমি স্কুলে আসি। এখানে কিছু সময় থাকার পরই আমার নিজেরই কেমন যেন অস্থির লাগতে শুরু করে। এতে আমার মনে হয় এখানে অঞ্জান হওয়ার মত কোন মেডিসিন ছিটানো ছিল। কেমন যেন একটা গন্ধ নাকে আসে। আমার ছেলেটা এখন অনেটাই সুস্থ আছে।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘গতরবিবার দুপর দুটার দিকে হঠাৎ করেই ছয় থেকে সাতজন ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমরা তাদের বিভিন্ন চিৎিসাকেন্দ্রে পাঠাই। পরে তারা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ায় বিষয়টি আমরা অনেকটা স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবেই নিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম হয়তো তারা না খেয়ে আসায় দুর্বল হয়ে অসুস্থ হয়েছে। কিন্তু সোমবার সকাল ১০টার দিকে অ্যাসেম্বলিতে একজন ছাত্র ও ছাত্রী অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলার বিষয়টি অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের দ্রুত ক্লাসে পাঠানোর পর একে একে আজ ৪০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী জ্ঞান হারিয়ে পেলে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আমরা দ্রুত অসুস্থ শিক্ষার্থীদের আশেপাশের বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্রে পাঠাতে থাকি। ইতিমধ্যেই অনেক শিক্ষার্থী সুস্থ হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। ঠিক কী কারণে তারা অসুস্থ হয়েছে তা বলতে পারছি না।’
আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘এতগুলো শিক্ষার্থীর অসুস্থ হওয়ার খবর পেয়ে ঘটনা শুনেই সেখানে পুলিশ পাঠাই এবং শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাকেন্দ্রে পাঠানোয় সহায়তা করি। ঠিক কী কারণে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়েছে তা চিকিৎসকরাই বলতে পারবেন। তবে আমাদের কাছে শ্রেণিকক্ষগুলো অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন মনে হয়েছে।’
বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তাহমিনা সুলতানা জানান, ‘আমাদের হাসপাতাল থেকে কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয় ও তিনজনকে ভর্তি করা হয়। ভর্তি হওয়া তিন শিক্ষার্থী এখন অনেকটাই সুস্থ। প্রাথমিকভাবে আমরা এটিকে ম্যাস হিস্টেরিয়া বা গণমনস্তাত্ত্বিক অসুস্থতা বলে ধারণা করছি। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলেও তিনি জানান।’