আরিফ খান: পাবনার বেড়া উপজেলার কাজিরহাট ও মানিকগঞ্জের আরিচা নৌপথে এবারের ঈদযাত্রায় ৩০০ টাকা করে ভাড়া আদায়ের অনুমোদন না দেয়া হলে স্পিডবোট বন্ধ রাখা হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন বোট মালিকপক্ষ। ঈদযাত্রায় একপাশ থেকে যাত্রী আসেন, অন্যপাশ থেকে যাত্রীহীন খালি বোট চলায় তারা বড় ধরণের লোকসানে পড়বেন জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান স্পিডবোট মালিক সমিতির সভাপতি রইস উদ্দিন।
অন্যদিকে নৌপথে স্পিডবোটে পারাপারে দীর্ঘ কয়েক বছর পর ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু এর তোয়াক্কা করছেন না বোট মালিকরা। ২১০ টাকার ভাড়া নেয়া হচ্ছে ২৫০ টাকা। এর সাথে যুক্ত করা হচ্ছে আরও ৫ টাকা ঘাটে প্রবেশ ফি হিসেবে। এছাড়া অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট সরবরাহ না করারও অভিযোগ পাওয়া যায়। এছাড়াও কোন বৈরি আবহাওয়া মানে না তারা এসব নিয়ম মানতে বিভিন্নভাবে তাগিদ দিলেও কাউকেই মানছেন না বোট মালিকরা। এতে সেই ভোগান্তিই পোহাচ্ছেন যাত্রীরা।
গত ২১ মে পাবনা নিউজ এ এ “ ২১০ টাকার ভাড়া ২৫৫, কাউকেই মানছেন না স্পিডবোট মালিকরা” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এর পর ২৯ মে বেড়া উপজেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা নির্ধারণকৃত ভাড়া ও ঈদুল আজাহা উপলক্ষে এই এই নৌপথে সুষ্ঠ ব্যবস্থা ও যাত্রীদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ঠ সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তিবর্গের সাথে মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর পরদিনই ঈদযাত্রায় ৩০০ টাকা করে ভাড়া আদায়ের অনুমোদন না দেয়া হলে স্পিডবোট বন্ধ রাখা হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন বোট মালিকপক্ষ।
বোট মালিক সমিতির সভাপতি ও বেড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রইস উদ্দিন আরও জানান, ইতোমধ্যে আমরা বিআইডব্লিউটি এর চেয়ারম্যান বরাবর একটি আবেদন পাঠিয়েছি। তাতে বলেছি, ঈদের আগে ও পরে মিলিয়ে ঈদযাত্রায় ৩০০ টাকা করে ভাড়া আদায় ছাড়া আমাদের ব্যাপক লোকসান হবে। এক্ষেত্রে প্রস্তাবিত ভাড়া আদায়ের অনুমোদন না পেলে বোট চালানো সম্ভব হবে না। ৪ জুনের পর যেকোনো সময় বোট বন্ধ করে দেয়া হবে। কারণ লোকসান গুণে তো কেউ বোট চালাবে না।
এ বোট মালিক সমিতির নেতা আরো বলেন, সাধারণ সময়ে ছোট বোটে প্রতি ট্রিপে সাড়ে ৩ হাজার ও বড় বোটে ৪ হাজার টাকা খরচ। আমাকে ১২ জন যাত্রী নিতে বলা হয়েছে ২১০ টাকা ভাড়ায়। তাহলে এখানে আমার লাভ হচ্ছে, নাকি লোকসান? এরপর আবার ঈদের আগে শুধু ঢাকা থেকে মানুষ আসে, যায় না। ঈদের পরে শুধু যায়, তেমন আসে না। এক্ষেত্রে এসময়ে একপাশ থেকে আমার যাত্রী ছাড়া খালি বোট চালাতে হচ্ছে। লোকসান আরো বেড়ে যাচ্ছে। এতো লোকসানে বোট কিভাবে চালানো যাবে? তাই আমাদের দাবি, শুধুমাত্র ঈদযাত্রায় ৩০০ টাকা ভাড়া আদায়ের অনুমোদন দেয়া হোক।
এব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ এর নগরবাড়ি-কাজিরহাট ঘাট কার্যালয়ের পোর্ট অফিসার আব্দুল ওয়াকিল বলেন, ২১০ টাকা ভাড়ার প্রজ্ঞাপন হলেও তারা মানতে নারাজ। পরে বেশ কিছু সংবাদ প্রকাশের পর দুইপাড়ের সেনাবাহিনীর সহায়তায় ভাড়া আদায়ে সরকারের নির্দেশনা মানতে বাধ্য করা হয়। ঈদে একমুখী যাত্রী পাবেন উল্লেটো করে এখন আবার তারা লোকসানের অজুহাতে ঈদযাত্রায় ৩০০ টাকা ভাড়া দাবি করছেন।
বিআইডব্লিউটিএ এর চেয়ারম্যান বরাবর আবেদনের বিষয়টি শুনেছেন জানিয়ে এ বন্দর কর্মকর্তা বলেন, অনুমোদন না পেলে ২১০ টাকা-ই ভাড়া আদায় করতে হবে। অনিয়ম করলে প্রয়োজনে বোটের রুট পারমিট বাতিল করা হবে। ঈদযাত্রায় কোনো ধরণের যাত্রী ভোগান্তি মানা হবে না।
এ ব্যাপারে পাবনার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে আদায়ের সুযোগ নেই। ঈদযাত্রা স্বস্তির করতে ইতোমধ্যে বোট মালিক সহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি সভা-ও করা হয়েছে। ৩০০ টাকা ভাড়া আদায়ের অনুমোদন না দিলে বোট বন্ধ রাখার বিষয়টি আপনার থেকে জানলাম। আমরা তৎপর আছি, নিয়মের বাইরে এমন করলে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর ও সময় বাঁচানোর লক্ষ্যে ২০১৬ সালের দিকে কাজীরহাট-আরিচা নৌরুটে লঞ্চ ও ফেরির পাশাপাশি স্পিডবোট চলাচল শুরু হয়। সাধারণত ১৩ ও গ্রীষ্মকালে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দুরত্বের এই নৌপথে ৪ টি ফেরি ও ৯ টি লঞ্চ চলাচল করে। এর সাথে বর্তমানে ১২ সিটের ১৪২ টি স্পিডবোট চলে দুইপাড়ে (আরিচা ও কাজিরহাট)। এতে করে এক ঘন্টারও বেশি সময়ের জলপথ পাড়ি দেয়া যায় ১৫ থেকে ২০ মিনিটে। একারণে প্রতিদিন হাজারেরও অধিক মানুষ যাতায়াত করেন স্পিডবোটে। ঈদের সময়ে প্রতিদিন প্রায় ৫-৬ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। সড়কপথে ঢাকার সাথে পাবনার দুরত্ব ৫ থেকে ৬ ঘন্টার। যানজটের কবলে পড়লে লাগতে পারে ৮ থেকে ১২ ঘন্টা সময়। সেখানে কাজিরহাট-আরিচা নৌপথে ঢাকা যেতে সময় লাগে ৪ থেকে সাড়ে ৪ ঘন্টা। দীর্ঘ সময় ক্লান্তির যাত্রায় ভোগান্তি কমাতে মানুষ এই নৌপথ বেছে নেন।