আরিফ খানঃ ঈদের বাকি আর দুইদিন। ইতিমধ্যে ছুটি হয়েছে বিভিন্ন অফিস আদালত। পরিবারের সাথে ঈদ উজ্জাপনের জন্য বাড়ি ফিরছেন সবাই। আর এই সুযোগে যাত্রীদের নিকট থেকে দ্বিগুন ভাড়া আদায় করছেন সিএনজি অটোরিক্সা চালকরা। মানিকগঞ্জের আরিচা থেকে নৌপথে পাবনার বেড়া উপজেলার কাজিরহাটে আসছেন লাখ লাখ ঘরমূখো মানুষ।
উপজেলার কাজিরহাট থেকে প্রায় সব যাত্রী সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠছেন। মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ হলেও যাত্রীর চাপ বেড়ে যাওয়ার সুযোগে এই যানের চালকেরা দুই থেকে তিনগুন ভাড়া আদায় করছেন।
জানা গেছে, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে বুধবার মধ্যরাতে র্যাব ১২-সিপিসি-২ পাবনা একটি টিম কাজিরহাট ঘাট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছেন। এতেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় থামছেই না।
একেকটি সিএনজি চালিত অটোরিকশায় চালকের পাশে দুজন ও পেছনে তিনজনসহ মোট পাঁচজন যাত্রী বহন করা হয়। কাজিরহাট থেকে কাশিনাথপুরের নিয়মিত ভাড়া ৩০ টাকা আর কাশিনাথপুর থেকে বেড়া বাসস্ট্যান্ডের ভাড়া ৩০ টাকা। সরাসরি কাজিরহাট থেকে বেড়ার ভারা ৫০ থেকে ৬০ টাকা। কিন্তু ঈদের ভিড় শুরু হওয়ার পর নেওয়া হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা করে। আবার বেড়া থেকে পাবনা শহর পর্যন্ত বাসের ভাড়া একেকজনের ৮০ টাকা হলেও এখন নেয়া হচ্ছে ১৫০ টাকা।
বৃহস্পতিবার সকাল দশটার দিকে উপজেলার কাজিরহাট বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, বেড়া ও কাশিনাথপুর যাওয়ার অপেক্ষায় অসংখ্য অটোরিকশা সারি (লাইন) ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সিরিয়াল অনুযায়ী সামনে থাকা অটোরিকশাগুলো অল্প সময়ের মধ্যেই বোঝাই হয়ে কাশিনাথপুর ও বেড়ার উদ্দেশে ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক ধরে ছুটে যাচ্ছে। যাত্রীপ্রতি আদায় করা হচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা।
সিএনজি চালক মো.আয়নাল হোসেন, রিপন, মিজান, ইকবাল হোসেনসহ কথা হয় একাধিক চালকের সাথে তারা জানান, বেড়া ও কাশিনাথপুর থেকে ফেরার পথে প্রায় খালি আসতে হচ্ছে। এ ছাড়া সারা বছর তেমন আয় হয় না। তাই ঈদের সময়ে কিছুটা বেশি ভাড়া নিয়ে থাকেন।
অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে বিকল্প না থাকায় তাঁরা বাধ্য হচ্ছেন বেশি ভাড়ায় গন্তব্যে যেতে। অটোরিকশার পাশাপাশি বাস ও ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাসেও বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা।
তবে বেড়া থেকে পাবনাগামী একাধিক বাসের চালক বলেন, বেড়া থেকে পাবনা পর্যন্ত নির্ধারিত ভাড়া ১৩৪ টাকা। অথচ এখন মাত্র ১০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। অবশ্য ঈদের আগে যাত্রীদের সুবিধার্থে আরও কমিয়ে মাত্র ৮০ টাকা নেওয়া হতো। ঈদ উপলক্ষে এখন ১০০ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
পাবনা জেলা কাশিনাথপুর শাখার সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিক সমিতির সভাপতি জালাল উদ্দিন জানান, ‘সারা বছরের বেশির ভাগ সময় ইনকাম কম হয়। তখন সবারই লোকসান হয়েছে। লোকসান কিছুটা পুষিয়ে নিতে সামান্য ১০-১৫ টাকা ওরা বেশি নিচ্ছে। তবে যাঁরা গাড়ি ভাড়া করছেন, তাঁরা খুশি মনেই বিষয়টি মেনে নিচ্ছেন। এই ছোটখাটো বিষয় নিয়ে লেখালেখি করার দরকার নেই বলে এ প্রতিবেদককে জানান’
মাধপুর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এমনিতেই মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চলাচল নিষিদ্ধ। মহাসড়কে এগুলোর চলাচল বন্ধে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এর ওপর অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে ।’
বেড়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোরশেদুল ইসলাম বলেন, ‘কেউ যাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে না পারেন, সে ব্যাপারে আমাদের কঠোর নজরদারি রয়েছে।’