নাছির হোসাইনঃ সপ্তাহ দুয়েক হলো পাবনার বেড়া-সাঁথিয়া উপজেলার হাট-বাজারে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। বাজারে গত বছরের তুলনায় কৃষকেরা এবার প্রতি মণে প্রায় এক হাজার টাকা বেশি দামে পাট বিক্রি করছেন। গত বছর শুরুতে নতুন পাট কৃষকেরা যেখানে দুই হাজার ৭০০ থেকে দুই হাজার ৯০০ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি করেছেন এবার নতুন পাট কৃষকেরা বিক্রি করছেন তিন হাজার ৭০০ তিন হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে। এ ছাড়া এবার পাটের ফলন যেমন ভালো হয়েছে তেমনি ভালো বৃষ্টি হওয়ায় পাট জাগ দেওয়ার জন্য খুব একটা পানির অভাবও হয়নি। ফলে সব মিলিয়ে এবার পাটচাষিরা বেজায় খুশি। তবে আগামী দিনে সরবরাহ বাড়লে পাটের দাম পড়ে যাবে কি না, এমন আশঙ্কায় আছেন কৃষকেরা।
দুই উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বেড়া উপজেলায় এবার প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে ও সাঁথিয়া উপজেলায় এবার ৭ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ায় এবার পাটের ফলন ভালো হয়েছে। কৃষি বিভাগের হিসাবে এবার প্রতি বিঘায় গড়ে নয় মণ ফলন পাওয়া গেছে। এ ছাড়া গত বছর বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকদের পাট জাগ দেওয়া নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল। কিন্তু এবার ভালো বৃষ্টি হওয়ায় তেমন পরিস্থিতি হয়নি।
তবে কৃষকদের মতে গত বছরের তুলনায় এবার পাটের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। বিশেষ করে এবার দিন মুজুর (কামলা) খরচ বেশি বেড়েছে। গত বছর দৈনিক ৭০০ টাকা মজুরিতে কামলা পাওয়া গেছে। কিন্তু এবার পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও ছাড়ানো বাবদ কামলা প্রতি দৈনিক ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা লাগছে। এতে গত বছরের তুলনায় এবার পাট চাষের খরচ প্রতি মণে দেড় থেকে দুই শ টাকা বেড়েছে। গত বছর যেখানে প্রতি মণ পাটের উৎপাদন খরচ আড়াই হাজার টাকার কাছাকাছি ছিল এবার তা বেড়ে দুই হাজার ৬০০ থেকে দুই হাজার ৭০০ টাকা হয়েছে। কিন্তু এবার গত বছরের তুলনায় নতুন পাট প্রতি মণে এক হাজার টাকা বেশি দামে বিক্রি হওয়ায় কৃষকদের প্রতি মণে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা লাভ হচ্ছে।
গত শনিবার ছিল বেড়া পৌর এলাকার করমজা চতুরহাটের সাপ্তাহিক পাটের হাট। এই হাটসহ উপজেলার বিভিন্ন হাটে সপ্তাহ দুয়েক হলো পাট উঠছে। যেসব কৃষক একেবারে প্রথম দিকে পাটের আবাদ করেছিলেন তাঁরাই পাট কেটে জাগ দেওয়ার পর শুকিয়ে হাটে পাট আনছেন। ফলে হাটে এখনও চোখে পড়ার মতো পাটের সরবরাহ হয়নি।
বেড়া উপজেলার পাচুরিয়া গ্রামের কৃষক আলম মোল্লা বলেন, ‘এবার পাটের ফলনও ভালো হইছে, আবার দামও ভালো পাত্যাছি। নতুন পাট ওঠার মৌসুমে গত বছর এবারের চাইতে এক হাজার টাকার মতো দাম কম ছিল। তাই গতবার লাভও ছিল সীমিত। কিন্তু এবার নতুন পাট বেইচ্যা মণে হাজার-বারো শ টাকা লাভ পাত্যাছি। তবে এমন ভালো দাম কয়দিন থাকে কিডা জানে।’
হাটে পাট কিনতে আসা সাঁথিয়া উপজেলার গৌরী গ্রামের পাট ব্যবসায়ী হানিফ শেখ বলেন, ‘এখন যত দিন যাবে হাটে পাটের সরবরাহ ততই বাড়বে। তবে মৌসুমের শুরু হিসেবে হাটে মোটামুটি ভালোই পাটের সরবরাহ দেখা যাচ্ছে। সপ্তাহ খানেক আগে পাটের দাম তিন হাজার ৯০০ টাকায় উঠেছিল। সেই তুলনায় আজকের হাটে মণে এক থেকে দেড় শ টাকা কমেছে। এর পরেও যে দামে পাট বিক্রি হচ্ছে তাতে কৃষক খুশি হয়ে বাড়ি ফিরছেন।’
বেড়া উপজেলার আমাইকোলা গ্রামের কৃষক আরশেদ আলী বলেন, ‘এবার পাটের ফলনও ভালো হইছে, আবার দামও ভালো পাত্যাছি। এবার নতুন পাট বেইচ্যা মণে হাজার বারো শ টাকা লাভ পাত্যাছি। তয় এমন ভালো দাম কয়দিন থাকে কিডা জানে।’
বেড়া উপজেলার রূপপুর গ্রামের কৃষক শহীদ বিশ^াস, পাঁচুরিয়া গ্রামের সাদ্দাম হোসেনসহ পাঁচ-ছয়জন কৃষক জানান, বর্তমান দামে কৃষক খুশি হলেও আগামী দিনগুলোতে সরবরাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম কমে যাবে কিনা তা নিয়ে তাঁরা চিন্তায় আছেন। এখন বেশির ভাগ কৃষকই অল্প অল্প করে পাট কেটে সেই পাট জাগ দিয়ে ও শুকিয়ে বাজারে আনছেন। বাকি পাট বাজারে আনতে আরও দুই থেকে তিন সপ্তাহ দেরি হবে। অনেকের আবার এর চেয়েও বেশি দেরি হবে।
বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত কবীর ও সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী জানান ‘কৃষক ভালো দাম পেলে তাঁরা আরও বেশি জমিতে পাট চাষে আগ্রহী হবেন। আবহাওয়া, ফলন ও দাম অনুযায়ী এবার কৃষক পাট চাষে লাভজনক অবস্থায় আছে। আমাদের হিসাবে বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী প্রতি মণে কৃষকের এক হাজার ২০০ টাকার বেশি লাভ হচ্ছে। তবে এখনও হাটে পাটের সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। তিন-চার সপ্তাহ পরে সরবরাহ স্বাভাবিক হলে বোঝা যাবে দাম কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।’